ফাতেমাতুজ জোহরা,ডিআইইউ প্রতিনিধি
বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীন জাতি।তবে আমাদের দেশে স্বাধীন শুধু আমাদের পুরুষ জাতি।নারী জাতি তাদের প্রাপ্য স্বাধীনতা ও সম্মান আজও পায়নি।
নারী পুরুষের সমান অধিকার কতটুকু সত্যিই তা বোঝা কঠিন।দেশের প্রায় অর্ধেক নারী তার সবগুলো দাঁতের মালিক হবার আগেই স্বামী তার মালিক হয়ে যাচ্ছে।যদি সত্যিই নারীরা স্বাধীন হতো তবে স্কুলের ব্যাগ বুকে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে কাঁদতে বলতে হতো না আমি শশুড় বাড়ি যাবো না,আমি পড়াশোনা করবো অনেক বড় হবো,আমি আমার বুকের ভেতরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নের বাস্তবায়ন করবো।একজন বাবা যিনি সরকারী কর্মকর্তা হয়ে তার কন্যা সন্তানের সুনিঃশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজের বারো বছরের মেয়েকে তুলে দেন চল্লিশ বছর বয়সী পুরুষের হাতে তখন একজন নারী হিসেবে তার মা তার কন্যার সাথে ঘটে যাওয়া এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারে না।এর কারণ নারী এখনও গৃহ কিংবা বাহিরে বাকস্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি।
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা “সাম্যের গান গাই – আমার চোখে পুরুষ – রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই”।”বিশ্বে যা মহান সৃষ্টি চির – কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”। যদি এমনি হতো তবে কেনো আমাদের দেশের নারীরা তার নিজ স্বামীর গৃহে নির্যাতিত। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দেখতে পাওয়া গিয়েছে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান নিজ ঘর।
শুধু ঘরে নয় ঘরের বাহিরে নানান জাগায় নানা ভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছে নারী।হোক সেটা তার কর্মক্ষেত্র বা তার শিক্ষার স্থান। সমান অধিকার সমান অধিকার বলে চিল্লাতে থাকা আমরা নূন্যতম অধিকার টুকুও দিতে ভুলে গেছি নারীকে। নিজের পবিত্রতা প্রমাণ করতে সীতাকে দিতে হয়েছিলো অগ্নি পরীক্ষা। যুগ যুগ ধরেই নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছে নারী। নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় দিয়ে যাচ্ছে না জানা হাজারো কোরবানি।
এখনও শোনা যায় এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় শিকার হওয়া হাজারো নারীর আহাজারি। ধর্ষনের শিকার হয়ে নিজের আত্মসম্মান হারানো নারীর কান্না। আর কতদিন গেলে, আর কত অগ্নি পরীক্ষা দিলে এসব থেকে পার পাবে নারী।যেখানে নিজের আত্মসম্মান বোধ টুকুও হারিয়ে ফেলছে সেখানে লেডিস ফার্ষ্ট -এই উক্তিটিকে শুধু লোক দেখানো বলে মনে হয়।
আজও অনেক দূর দূরান্ত থেকে ভেসে আসে,মেয়ে হয়েছে এই দুঃখে বাবা নিজে তার মেয়ের কান্নাকে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়ার সংবাদ। সমাজে ছেলেদের এত চাহিদা,ছেলেরাই যদি সব হতো তবে শত শত বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠতো না। রাস্তায় পড়ে থাকা মায়ের বুকের কষ্ট – ছেলে ফেলে চলে যাবার ঘটনা শুনতে হতো না।
মেয়েরা কখনো তার মা বাবাকে ফেলে দিতে পারে না। একজন মেয়ের জন্য তার বাবাই তার প্রথম ভালোবাসা ও আদর্শ, নারী মা হিসেবে তার সন্তানের সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষিকা/পাঠদানকারী,স্ত্রী হিসেবে তার স্বামীর সঠিক পথ প্রদর্শনকারী। আসুন আমরা সম্মান জানাই আমাদের সমাজের নারী তথা বিশ্বের প্রতিটি নারীকে।
নারী মানেই নয় আনাড়ি,এটি প্রমাণ করার সু্যোগ করে দেই। তাদের প্রাপ্য অধিকার দিয়ে তাদেরকে সাথে নিয়ে কাধেঁ কাঁধ মিলিয়ে উন্নয়নের পথে হাঁটি।
লেখক- শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।