অনলাই‌নে অ‌ধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস কর‌তে না পার‌লেও প‌রীক্ষা ৯ আগস্ট

জাফর আহমেদ,ডিআইইউ প্রতিনিধি: ইউজিসির নির্দেশে গত এপ্রিলেই ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস,সেমিষ্টার ফাইনাল এক্সাম ও খুব বেশি দূরে নয়।সাধারণত অনলাইন ক্লাসও এক্সাম গুলো শিক্ষকেরা জুমের মাধ্যমেই নিয়ে থাকেন, যার জন্য দরকার স্মার্ট ডিভাইস ও উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যাবস্থা।করোনার কারণে সারাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার কারণে গ্রাম ও মফস্বল থেকে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা আবার নিজ নিজ গ্রামেই অবস্থান করছে।স্মার্ট ডিভাইস ও ইন্টারনেটের শক্তিশালী সংযোগ না থাকায় ক্লাস করতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর-ই বেগ পেতে হচ্ছে।

কাড়াকাড়ি টাকার নেট কিনেও অনেকে উচ্চগতিসম্পন্ন নেটওয়ার্ক না পাওয়ার কারণে ঠিক মতো ক্লাস ও এক্সামে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।অনলাইন ক্লাস শিক্ষা চালু হওয়ার পরে একটি সেমিষ্টার শেষ করে আরও একটি সেমিষ্টারের ফাইনাল এক্সামে শিক্ষার্থীদের দ্বারপ্রান্তে এসে হাজির। আগামী ৯-ই আগষ্টে শুরু হচ্ছে অনলাইন পরীক্ষা।

এছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা বন্যায় প্লাবিত হবার কারণে উত্তরাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস ও এক্সামে অংশগ্রহণ করাটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

ত‌বে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী জানিয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক -এর কোনো প্রব্লেম ও হচ্ছে না,ক্লাস করে তারা সময়ের সাথে সাথে এগিয়েও থাকছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র “ইসমাম”(৪২/এ) জানিয়েছেন, এই মহামারী করোনাভাইরাস এর জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে আমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমাদের ইউজিসি থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে দিয়েছে অনলাইন ক্লাস নেবের,যাতে আমাদের সেশনজট না হয়। ছুটির ফলে যে যার মতো নিজ নিজ গ্রামে বা শহরে অবস্থান করছে। আমি নিজেই গ্রামে আছি, আমাদের গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগের অনেক প্রবলেম হচ্ছে। তাই আমাদের ক্লাস করতে পরীক্ষা দিতে অনেক প্রবলেম হয়। মাঝে মাঝে ক্লাস করতে করতে ইন্টারনেট প্রবলেম এর জন্য কল কেটে যায়। এই ইন্টারনেটের জন্য অনলাইন ক্লাস করতে অনেক প্রবলেম এর সম্মুখীন হতে হয় আমাদের।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মুনিরা আক্তার”(৩৭/বি) জানিয়েছেন,অনলাইন ক্লাস ও পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আমার যে যে সমস্যা হচ্ছেঃ ১.প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা। ২.ওয়াইফাই কিংবা ইন্টারনেট ডেটা প্যাক কেনার সামর্থ্য না থাকা। ৩. ক্লাস চলাকালীন বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। ৪.কিংবা ডিভাইস-ইন্টারনেট-বিদ্যুৎ সব থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত নেটওয়ার্ক না পাওয়া। অনলাইন ক্লাস বলতে বোঝায় জুম, গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট, ওয়েবএক্সের মতো অ্যাপস ব্যবহার করে সরাসরি ক্লাস পরিচালনা। এই অ্যাপসগুলো ব্যবহার করে ক্লাস প্রদান ও গ্রহণ উভয়ই ব্যয়বহুল। এমনকি ফ্রি ভার্সনে ৪০ মিনিট ক্লাস পরিচালনা করলে এবং ক্লাসে অংশগ্রহণ করলে। আর এই অ্যাপসগুলো ব্যবহারে যে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট গতি দরকার হয়, তা কেবল বড় শহরগুলোতেই সম্ভব হয়।

এবার আসা যাক অনলাইন এর মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছেঃ পরীক্ষা কার্যকম চলাকালীন সময়ে সরেজমিনে পর্যবেক্ষন না থাকায় আমরা বিভিন্ন সুযোগ নিচ্ছি।

যার ফলে আমাদের পাঠ্য বইয়ের বিষয় সমূহের উপর জ্ঞানন চর্চার বিষয়ে উদাসীনতা সৃষ্টি হচ্ছে।অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এছাড়াও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী “ফাতেমা-তুজ-জোহরা” (৪২/এ) জানিয়েছেন,অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা দুটোই আমাদের জন্য একদম নতুন বিষয়। নতুন সবকিছুই প্রথমে একটু সমস্যার মনে হলেও ব্যাবহার করতে করতে সহজ হয়ে যায়। অনেক দিন হলো আমরা অনলাইনে ক্লাস করছি এখন মোটামুটি সবাই এটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। নেটওয়ার্ক জনিত কিছু সমস্যা থাকলেও বর্তমানে সবমিলিয়ে ভালোই লাগে এখন ক্লাস করতে। ক্লাস করছি পরীক্ষা দিচ্ছি এতে করে আমরা নিজেরাই এগিয়ে থাকছি। ভবিষ্যতে কোনও সেশন জটে পড়তে হবে না আশা রাখছি।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আরও একজন নিয়মিত ছাত্রী “মনা”(৪১/এ) জানিয়েছেন তার স্মার্ট ফোন থাকা সত্ত্বেও নেটওয়ার্ক সিষ্টেম দূর্বল হবার কারণে অনলাইন ক্লাস করতে ও এক্সামে অংশগ্রহণ করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে।পরবর্তীতে সম্মানিত শিক্ষকদের সহযোগীতায় ফোন কলে ভাইভা এক্সাম ও প্রয়োজনীয় এসাইনমেন্ট দিচ্ছি।তবে এই অনলাইন এডুকেশান চালু না থাকলে আমরা মূলস্রোতের শিক্ষা থেকে বহু পিছিয়ে থাকতাম।অনলাইন শিক্ষা তাই আশার আলোই দেখাচ্ছে।

পরিশেষে এই প্রতিটি সুক্ষাতিসুক্ষ্ণ ব্যাপার গুলো পর্যবেক্ষণ করে বলা যেতেই পারে, এই করোনাসহ নানা সংকটে,ও বন্যায় প্লাবিত হয়ে যাওয়া দেশের নাজুক পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষাটা অল্প কিছু শতাংশ ছেলে-মেয়েদের জন্য ভালো হলেও দেশের সাধারণ ও মধ্যবিত্ত,ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য খুবই ভয়াবহ।এ যেনো জীবন,সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে গর্বিত হওয়ার স্বপ্ন দেখার অধিকার আর ভেঙে ফেলার অধিকার পরিবেশ-পরিস্থিতির। তবুও কবির ভাষায় বলতে চাই,
আশাই জীবন, জীবনের শ্রী।
দুঃখ-কষ্ট যতো হচ্ছে প্রকটে,
সুখের হাত ছানি
যেনো আরও আরও সন্নিকটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *