ঘৃণ্য প্রথা যৌতুক ও ইসলাম

কল্যাণময় জীবন ব্যবস্থা ইসলাম। অকল্যাণের সঙ্গে এ জীবন ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। মানব সমাজকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে ইসলাম।মানুষের জন্য অবমাননাকর কোনো কিছুই ইসলামে অনুমোদনযোগ্য নয়।

যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ। যৌতুককে নারী-নির্যাতনের মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।একদল নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছে,কিন্তু যৌতুকের করালগ্রাস থেকে মুক্তি মেলেনি এদেশের নারী সমাজের। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারী সমাজ তথা রাষ্ট্রকে বাঁচাতে রয়েছে আইন। কিন্তু একের পর এক আইন করেও যৌতুক তথা নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাচ্ছেনা। যৌতুকের কারনে নারী নির্যাতনের কোনো সঠিক হিসাব আমাদের নাই। সব নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমে আসেনা। দৃষ্টির অগোচরে থেকে যায় নারী নির্যাতনের অনেক করুণ কাহিনী।

ইসলামি বিধানমতে কনের পক্ষ থেকে বরকে বিয়ের সময় বা তার আগে-পরে শর্ত করে বা দাবি করে অথবা প্রথা হিসেবে কোনো দ্রব্যসামগ্রী বা অর্থ-সম্পদ ও টাকাপয়সা নেওয়া বা দেওয়াকে যৌতুক বলে। শরিয়তের বিধানে যৌতুক সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ এবং কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ।‘ছেলেপক্ষ যে অর্থ দেয় তা হলো মহর, মেয়েপক্ষ যা দেয় তা হলো যৌতুক।’ মেয়ের বাড়িতে শর্ত করে আপ্যায়ন গ্রহণ করাও হারাম যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত। যৌতুক চাওয়া ভিক্ষাবৃত্তি অপেক্ষা নিন্দনীয় ও জঘন্য ঘৃণ্য অপরাধ। আমাদের দেশের আইনেও যৌতুক শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ।

মনুষ্যত্বের জন্য অবমাননাকর যৌতুক প্রথার কোনো ঠাঁই ইসলামে নেই। নারী নিগ্রহের এ প্রথা ইসলামী বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
ইসলাম নারীকে মর্যাদার আসন দিয়েছে। বিয়ের সময় স্ত্রীর কাছ থেকে যৌতুক নেওয়া নয় বরং স্ত্রীকে মোহর দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে ‘তোমরা নারীদের তাদের মোহর, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে। ‘ ইসলাম শুধু যৌতুক প্রথার বিরোধীই নয় বিয়েশাদির ক্ষেত্রে সব ধরনের অপচয়ের বিপক্ষে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সেই বিয়েই সর্বাধিক বরকতময়, যে বিয়েতে ব্যয় খুব সামান্যই হয়।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিয়ে করেছেন সাধারণভাবে, নিজের প্রিয় কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) কে বিয়ে দিয়েছেন একইভাবে। বিয়েতে অপব্যয় পাত্র-পাত্রীর পরিবারের জন্য কষ্টকর পরিণতি ডেকে আনে। সামাজিক সম্মান রক্ষার অজুহাতে অনেকে বিয়েতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করে দেউলিয়া হয়ে পড়ে। যা ইসলাম কোনোভাবেই অনুমোদন করে না।

কাপুরুষত্ব,ইসলামিক জ্ঞানহীনতা ও প্রচণ্ড অর্থ লালসা থেকেই যৌতুক প্রথার সৃষ্টি। দারিদ্র্য ও স্বল্প সময়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার কামনাও যৌতুক প্রথা বৃদ্ধি হওয়ার কারণগুলোর একটি অন্যতম বড় কারণ। বেকারত্ব, হতাশা এবং সঠিক নৈতিক শিক্ষার সঙ্কটেও যৌতুকের প্রসার এতটা ভয়াবহতায় পৌঁছাচ্ছে। এ ছাড়া কুসংস্কারে আচ্ছন্নতা ও উচ্চভিলাষী মনমানসিকতাও এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যৌতুকের বলি হয়ে কত মা-বাবা তার আদরের মেয়েকে হারিয়েছে ইয়ত্তা নেই। সুতরাং যৌতুকের লাগাম এখনই টেনে ধরতে না পারলে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমাজকে ঘৃণ্য অপরাধ যৌতুক প্রথা থেকে হেফাজত করুন।(আমিন)

লেখক: মোহাইমিনুল ইসলাম (তুষার)
শিক্ষার্থী- আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়
কায়রো,মিশর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *