স্মৃতিচারণ ও ফিল্ড ট্রিপ

বাসায় বসে এমনিতেই সময় কাটে। মাঝেমধ্যেই খুব ভালো লাগে ভালো সময়গুলো নিয়ে ভাবতে। তাই স্মৃতি থেকে কিছু মূহুর্ত নিয়ে লিখতে বসে গেলাম। ২০১৮ এর শেষদিকটা চলে এল তখন সেপ্টেম্বর মাস। কিছুদিন আগেই ২য় সেমিস্টারের ক্লাস টেস্ট, মিডটার্ম অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শেষ হলো। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে খুব করে প্রস্তুতি চলছে সব ক্লাসমেট দের, সবাই মিলে একসাথে চট্টগ্রাম যাবো। আমাদের শিক্ষক মহোদয়রা বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছেন কি কি করতে হবে, কি কি করা যাবেনা। এবং কি কি নেয়া যাবে, কি কি নেয়া যাবেনা। জমকালো সময় আসছে সামনে অবশেষে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর চলে আসলো। ব্যাগপ্যাক হয়ে গেছে জামাকাপড়, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিয়েছি সাথে কিছু ড্রাইফুড ও কিনে দিয়েছিল। একদম ভোরবেলা ৬/৭টার দিকে মামা আমাকে ইউনিভার্সিটিতে ছেড়ে আসছে। আমাদের বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ভার্সিটি থেকে ছেড়ে যাবে নির্দিষ্ট সময়ে। এক এক করে সবাই ভার্সিটি পৌঁছে গেছে। ভার্সিটির নিজস্ব বাসে করেই আমদেরকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় সবসময়। বাস গুলোতে অনেক স্পেস এন্ড খুবই কমফোর্টেবল, আমার মোশন সিকনেস আছে তাও জার্নিতে খুব বেশি খারাপ লাগেনা। আমাদের সাথে দুইজন শিক্ষক গেলেন একজন ম্যাম ও স্যার, সাথে ডীন স্যার ও গেলেন। আমরা ঢাকা থেকে কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে গেছিলাম। খুব ফটোসেশন হলো, সবাই যার যার মতো ছবি তুল্লো অফ টু চিটাগং ফেসবুক পোস্ট করল।

বাস ছাড়ল বিভিন্ন মিউজিক চলছে, সবাই তাদের জার্নি উপভোগ করছে, কেউ বাসে গেম খেলছে, কেউ কেউ বাসা থেকে শুকনো খাবার নিয়ে আসছে আমরা জমিয়ে খেলাম। কখনো কখনো গান ধরছে, আড্ডা হচ্ছে বাসে। বাস কুমিল্লা পৌঁছানোর পর আমাদের দুপুরের খাবার খেলাম একটা রেস্টুরেন্টে। ওখান থেকে আবার বাসে করে চিটাগং পৌঁছালাম তারপর বাস থেকে নেমে বোটে করে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে গিয়েছিলাম। সন্ধার পরে বোট জার্নি করেছিলাম দ্যাট ওয়াজ অ্যাডভ্যাচারাস। আচ্ছা এখানে একটা কথা বলা হয়নি পুরো ১২-১৩ দিনের ফিল্ড ট্রিপের যেই ব্যাগ, লাগেজ সেগুলো আমরা নিজেরাই বহন করি। মাঝেমধ্যে একজন আরেকজনকে একটু হেল্প করে দেয়। আমরা প্রথম ৪-৫দিন আবাসিক ছিলাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে। এশার আজান হয়ে গিয়েছিল ফিশারিজ একাডেমিতে পৌঁছাতে তারপর আমরা যার যার রুমে গেলাম, ফ্রেশ হলাম, রাতের খাবার খেলাম। দেন ফারহানা ম্যাম সবাইকে একাডেমির বাইরে নিয়ে গেলেন, চা খাওয়ালেন। এখানে আমার একটা খারাপ লাগার ব্যাপার আছে সেটা হলো ওখানে রং চা করেনা। পুরা ফিল্ড ট্রিপে চা খেতে পারিনি যেহেতু আমি দুধ চা খাইনা। যাইহোক অনেক জার্নি হলো সবাই ক্লান্ত রুমে এসে ঘুমিয়ে পরেছে। একদম সকাল সকাল উঠতে হতো আমাদেরকে আনুমানিক ৬টা, ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খাওয়া তারপর জটপট রেডি হয়ে বোট ধরতে হবে ৮টার দিকে। বোটে করে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে বাসে করে চিটাগং ইউনিভার্সিটি যাওয়া ১০ টার মধ্যে, যেটা আমাদের মেইন উদ্দেশ্য। এবং আমাদের অলমোস্ট ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ক্লাস চলে এরমধ্যে লাঞ্চের জন্য সময় দেয়া হয়। চিটাগং ইউনিভার্সিটিতে আমাদের ৪-৫ টা সেকশনে ক্লাস নেয়া হয় আই মিন আমাদেরকে লেকচার ক্লাস করানো হয়, ল্যাবে এক্সপেরিমেন্ট করানো হয়, সরাসরি ফিল্ডে নিয়ে কাজ করানো হয়। তারপর আবার আমাদের পরীক্ষা নেয়ার কিছু সেকশন রয়েছে যেমন ল্যাবে সরাসরি এক্সপেরিমেন্ট করা দেন ল্যাবের লিখিত পরীক্ষা, স্পটিং এবং সবথেকে মজার ও ইন্টারেস্টিং হলো মডেলিং করা।

ফিল্ড ট্রিপ এবং ল্যাব মিলিয়ে মোটামুটি ৩-৪ ক্রেডিট সম্পন্ন করে আসি আমরা ১২-১৩ দিনের ফিল্ড ট্রিপে, একটু চাপের হবে। কিন্তু এর জন্য আপনি কখনো অনুশোচনা করবেননা, আমি সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমাদের বিভিন্ন রকমের অবিজ্ঞতা হয়েছিল যেমন ম্যানগ্রোভে কাজ করেছি, বীচে কাজ করেছি, জাহাজে কাজ করেছি ল্যাব পারপাসে। সলিমুদ্দিন ম্যানগ্রোভে যাওয়ার সময় অনেক ফানি ব্যাপার ঘটেছিল একটু পর পর কাদার মধ্যে একেকজন পরে যাচ্ছিলো, আমার জুতাটা ছিঁড়ে গেছিলো। ওখানে স্যাম্পল কালেকশনের জন্য নিয়ে গিয়েছিল ওইদিনই আমাদেরকে পতেঙ্গা সী বীচে নিয়ে গেছিলো এরমাঝে আবার লাঞ্চ করিয়েছিল রিভারাইন রেস্টুরেন্টে। আর ভী মীন-সন্ধানী শিপে আমরা বিভিন্ন ফাইটোপ্লাংটন জুপ্লাংটন স্যাম্পল সংগ্রহ করেছিলাম। বিকাল ৫টার পর ফিশারিজ একাডেমির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতাম মাঝেমধ্যে পৌঁছাতে একটু রাত হয়ে যেত। একাডেমিতে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে গোসল সেরে এক এক করে বের হয়ে যেতাম পন্টুনের দিকে। ওই সময়গুলো বেস্ট সব বন্ধুরা আড্ডা দিতাম, রাত ১১টা পর্যন্ত গেইট খোলা রাখা হতো। এরমাঝে রাতের খাবার খেয়ে আসতাম ৯টায়। রাতের বেলা কর্ণফুলী নদীর পাড়ে পন্টুনে বসে মৃদু বাতাস আবার কখনো জড়ো হাওয়া বইছে, থেকে থেকে জোয়ার আসছে “আমরা গান ধরছি, ওরে নীল ধরীয়া আমায় দেরে দে ছাড়িয়া, বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি হায়রে কান্দে রইয়া রইয়া”। কখনো আমরা মজার কোন খেলা খেলছি, গান শুনছি। কেউ ফটোগ্রাফি কেউ আবার ভিডিওগ্রাফি করছে। আমাদের ভিষণ রকম অ্যাসথেটিক সময় কেটেছে। ১১টার পর রুমে এসে ঘুমিয়ে পরতাম কারণ সবাই ততোক্ষণে ভিষণ ক্লান্ত হয়ে পড়তো। এখানে একটা কথা বলতে চাই ফারহানা ম্যাম আমাদেরকে অনেক সহ্য করেছিলেন কারণ আমরা যেহেতু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে (যেমন মেরিন ফিশারিজ একাডেমি, বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি) আবাসিক ছিলাম অতএব এখানে অনেক রুলস্ রেস্ট্রিকশন মেনে থাকতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা তোহ ভার্সিটির স্টুডেন্ট আকাশে পা রেখে হাটি কাইন্ড অব যার জন্য টিচার স্টুডেন্ট উভয়পক্ষকেই একটু মানিয়ে নিতে হয়েছিল। কখনো একটু বকা খেয়েছি আবার ডেকে বুঝিয়েছেন দেন আবার ট্রিট দিয়েছেন। মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে ৪-৫দিন অবস্থান করেছিলাম এবং বাকি ৪দিন ছিলাম বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে। মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে শেষ দিন, সকাল সকাল আমরা ব্যাগপ্যাক করে নিয়েছি যেহেতু ৪-৫দিন ফিশারিজ একাডেমিতে ছিলাম আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সকালবেলা ব্রেকফাস্ট শেষ করে রেডি হয়ে আমরা ওদের সংরক্ষিত বে অব বেঙ্গল এর সকল ফিশারিজ স্পেসিস গুলো দেখলাম। তারপর কর্ণফুলী নদী পার হয়ে বাসে করে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে পৌঁছলাম। তখন দিনের ১০/১১টা বাজছে আমি চেঞ্জ করেছি গোসল করে ঘুমাবো। কারণ ব্যাগপ্যাক করা, তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়েছিলাম, লাগেজ ক্যারি করেছি দেন জার্নি সব মিলিয়ে মোটামুটি ক্লান্ত ঠিক তখনি সিআর এসে বল্লো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও লেডিস। ৫মিনিটের মধ্যে বাস ছেড়ে দিবে ক্লাস আছে। আমার মনে হচ্ছিলো কান্নাই করে দিব কিন্তু সময় হয়ে উঠেনি। যেই কথা সেই কাজ আমাদের ক্লাস হলো হাইড্রোগ্রাফিক চার্টের ওপর, কিভাবে ক্যাম্পাস ব্যবহার করা হয় এন্ড এভরিথিং আই একচুয়ালি এনজয়েড দ্যা ক্লাস। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে আমরা রুমে বসেই আড্ডা দিতাম যেহেতু বাইরে বের হওয়া নিষেধ। নেভাল একাডেমিতে দ্বিতীয় দিনে, বানৌজা ঈশা খানে নিয়েগেছিলো সেখানে ৪টা সেকশনে ক্লাস নিয়েছিলো প্রাকটিক্যালি জিপিএস নিয়ে, এংগেল মেজারমেন্ট, সী লেভেল হাইট মেজারমেন্ট, থিওডোলাইটের মাধ্যমে ডিস্টেন্স নির্ণয় ইত্যাদি শিখিয়েছিলো প্রাথমিক লেভেলে। ওখান থেকে আমরা সন্ধায় রুমে ফিরেছিলাম দেন ফ্রেশ হয়ে রিফ্রেশমেন্টের জন্য ওয়েস্ট পয়েন্টে নিয়ে গেছিলেন স্যার ও ম্যাম এন্ড আমরা প্রায় ৮-৯টা পর্যন্ত ছিলাম। খুব মজা মিস্তি, খাওয়া দাওয়া এবং অনেক খেলাদুলা আড্ডা হলো।

পরেরদিন বিএনএস শৈবাল শিপে আমরা চিটাগং থেকে মংলার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়েছিলাম। আমাদেরকে জিপিএস, রাডার, সিঙ্গেল বীম ইকোসাউন্ডার, মাল্টি বীম ইকোসাউন্ডার, সাইড স্ক্যান সোনার ইত্যাদির ওপর লেকচার দিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন রুমে গিয়েছিলাম এন্ড দ্যাট ওয়াজ সো এক্সাইটিং এবং প্রাকটিক্যালি দেখিয়েছিলেন। আমরা বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্টস শিপ থেকে সমুদ্রে নামিয়েছিলাম যেমন সাইড স্ক্যান সোনার, ডপলার, সিটিডি ইত্যাদি। শিপেই সকালের খাবার খেলাম কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য আমরা মংলা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি কারন অনেকে সী সিকনেসের ভুক্তভোগী ছিলো। আমরা তখন মাঝ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় তিতলি আঘাত হানে এবং প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল যারজন্য আমাদের শিপ চিটাগং ব্যাক করে। এবার কিছু মজার ঘটনা বলি আমি খুব কনফিডেন্ট ছিলাম যেহেতু ভোলার মেয়ে লঞ্চে অনেক জার্নি করা হয়েছে। আমার তো কিছু হতেই পারেনা বরং আমি অনেক এনজয় করব এসব বলে বেড়িয়েছিলাম সবাইকে। কিন্তু রিয়েলিটি যা হয়েছিলো ক্যাপ্টেন রুমে তখন আমার গ্রুপ, নেভি অফিসার এন্ড অন্যরা লেকচার দিচ্ছেন। আমাদের ডীন স্যার ও ছিলেন তো আমার হাতে নোট খাতা, কলম শুনছিলাম আর নোটস্ করছিলাম। ইতোমধ্যে অনেকজন অসুস্থ হয়ে গেছিলো, আস্তে আস্তে মনে হচ্ছিল আর পারছিনা, মাথাটা ঘুরছে, পরে যেতে পারি তাও জাস্ট দাড়ায়ে আছি কারণ মানসম্মানের ব্যাপার। তখন আমি বুঝতে পারলাম লঞ্চ এন্ড শিপ মোটেও এক না, এদের মধ্যে কোন মিল নেই এবং আমি এতোদিন গবেট ছিলাম। দেয়ালে পিট ঠেকে গেছে আর পারছিলামনা দেন ক্যাপ্টেন রুমেই একটু সাইড হয়ে চুপি চুপি বসে দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলাম। তখন শুধু বুঝতে পারছিলাম সমুদ্রের প্রচন্ড ঢেউ, একদিক ডুবে যায় অন্যদিক ভেসে উঠে আবার তার বিপরীত ঘটনা ঘটে, প্রচুর রোলিং হয়েছিল এবং তখনই মাঝ সমুদ্রে শিপ ব্যাক করে। পরে বন্ধুদের থেকে শুনতে পেলাম আমি নাকি তখন ফায়ার সার্ভিসের সুইচ অন করে ফেলেছিলাম দেন শিপের ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ক্যাপ্টেন রুমে এসে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলেন কিন্তু সেরকম কিছুই ঘটেনি বাস্তবে। দেন তারা ফ্যান ছেড়ে একটা চেয়ার দিয়ে গেছিলো আমি বসে টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে সুন্দর একটা ঘুম দিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি শিপ চিটাগং পৌঁছে গেছে আর একমাত্র আমি ছাড়া সবাই ভিজেছিল। আমি সব মিছ করে ফেলেছি এবং এটা আমার একটা কষ্টের জায়গা। শিপে সবাই অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলেছিলো। যাইহোক শিপেই আমরা জমকালো লাঞ্চ করলাম ওইভাবে শেষ হলো আমাদের দিন। এছাড়াও বাংলাদেশ নেভির প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নেভি ওশানোগ্রাফিক এন্ড হাইড্রোগ্রাফিক সেন্টার, চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড ভিজিট করিয়েছিলেন এবং দুটো প্রতিষ্ঠানই আমাদেরকে একটা করে ক্যাপ উপহার দিয়েছিলেন। শেষদিন আমাদের কিছু লেকচার সেশন নিয়ে ফাইনাল রিটেন এক্সাম হয়েছিল। আমাদেরকে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে গ্রান্ড ডিনার করানো হলো। সেইবারের মতো আমাদের ফিল্ড ট্রিপ শেষ আমরা চিটাগংকে বাই বাই বলে ঢাকা ফিরলাম।
আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে বলবো আমি ২য় ফিল্ড ট্রিপে বেশি এনজয় করেছি, ৪র্থ সেমিস্টার। চিটাগং যাওয়ার আগের দিন বাসার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসছি হলে। তখন হলে আমার সিট ছিলো। সবাই যারযার ব্যাগপ্যাক করে ফেলছে আমার কিছুই করা হয়নি একটু চিন্তিত ছিলাম বাট “ফ্রেন্ড আছে যেখানে চিন্তা কিসের সেখানে” দুই ফ্রেন্ড মিলে রাতে ব্যাগপ্যাক করে দিল। দেন মুভি দেখলাম আমরা, দেরি হওয়ায় আর ঘুমাইনি ভোর ভোর বাসে পছন্দের সিট নিতে হবে তাই। যাইহোক হলের সামনে থেকে বাসে উঠলাম জার্নিতে সবসময়ই বাসে মিউজিক, গান চালানো হয়। ফিল্ড ট্রিপের আমেজে আছে সবাই, ভার্সিটি এসে সবাইকে বাসে তুলে অফ টু চিটাগং আমরা। আমি সুন্দর একটা ঘুম দিয়ে ফেলেছি যেহেতু রাতে ঘুমাইনি। আমাদের গন্তব্য মেরিন ফিশারিজ একাডেমি এবারে আগেই পৌঁছে গেছি, এটা ২০১৯ অক্টোবর। আছরের একটু পরে গোসল সেরে সরাসরি পন্টুনে চলে গেছি সবাই মোস্ট ফেভারিট প্লেস। সেলফি, ফটোসেশান হলো প্রথমদিন আমরা আড্ডা দেয়ার সময় বেশি পেয়েছিলাম।

রাতে ৯টায় খাবার খেলাম সবশেষে সবাই ঘুমাতে চলে গেছে, আমরা ৪জন একরুমে ছিলাম। তারমধ্যে ৩জনই ঘুমায়ে গেছে লাইট অফ করে কিন্তু আমার সামহাউ ঘুম আসেনি। ভাবছিলাম কি করা যায় দেন চুপি চুপি উঠে অন্য দুই রুমে গেলাম। ওদের লাইট অন করে ডাকলাম “এই চা করছি সবার জন্য, খেতে আয়” এরপর আমাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি কারণ লুকায়ে গেছিলাম। ওরা আমার রুমে যায়ে দেখল সবাই ঘুমায় লাইট অফ। লাইট অন করে আঁচল আর নওশিনকে তুলে ফেল্লো, আমি বের হলাম। ঢাকা থেকে আমরা ওয়াটার হিটার নিয়ে গেছিলাম সাথে টি-ব্যাগ, চিনি। সবার পানির বোতল থেকে পানি সংগ্রহ করলাম দেন আমাদের আল্টিমেট রং চা প্রস্তুত কিন্তু আমরা মানুষ ছিলাম ৭জন। শুধু আমি একটা মগ নিয়ে গেছিলাম আর দুটো ওয়ান টাইম কাপ ছিলো এখন বাকিরা কিসে করে খাবে? হটাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো, দেখলাম বেশ কতগুলো মাম পানির বোতল আছে। দেন ছুরি দিয়ে বোতলগুলো অর্ধেক করে কাটলাম আমাদের চায়ের কাপ রেডি দেন আমরা তো খুব খুশি, সবাই একসাথে চা খেলাম। একটু অ্যাস্থেটিক ছবি তোলার চেষ্টা করলাম এইতো। আমরা নিয়মিত চিটাগং ইউনিভার্সিটিতে ১০টা থেকে ৪/৫টা পর্যন্ত ক্লাস করতাম ব্যাক করে আবার জমিয়ে আড্ডা হতো। আমাদের বায়োলক্যাল ওশানেগ্রাফি ল্যাবের স্যাম্পল কালেক্ট করেছিলাম পতেঙ্গা বীচ থেকে এবং বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ওখানে নদী থেকে। নদী থেকে বোটে করে একেকটা গ্রুপ নেমে স্যাম্পল কালেক্ট করছিল। সব স্যাম্পল সংগ্রহ শেষে একটা জমকালো লাঞ্চ হয়েছিল ঐদিন বোনানযা রেস্টুরেন্টে, আই এনজয়েড দ্যা ফুড। ফিশারিজ একাডেমিতে ৫ দিন শেষ, শেষের দিন চিটাগং ইউনিভার্সিটিতে আমাদের দুইটা ল্যাব কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট, রিটেন এক্সাম পড়া, স্পটিং এর পড়াশোনা দ্যাট ওয়াজ হিউজ। সারাদিনের ক্লাস শেষে বিকাল ৬-৭টার দিকে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাচ্ছিলাম পড়াশোনা করতে হবে কিন্তু ফ্রেন্ড ডেকে বলতেছিলো দেখ, লাইফের শেষদিন ফিশারিজ একাডেমিতে ব্রো মিস করা ঠিক হবেনা। এমনে লোভ লাগিয়েছে যে আর ঘুমাতে পারিনি অন্য দিনের মতো ১১টায় রুমে ফিরে পড়তে বসছি এবার তোহ ঘুম আমাকে ছাড়ছে না। অনেক টেনেটুনে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ বেশিরভাগ শেষ করলাম এখনো কিছু ছবি আকা বাকি, অল্প কিছু সময় পড়তে পারছিলাম সো প্রিপারেশন ও বাকি। ঐদিন চিটাগং ইউনিভার্সিটিতে এক্সাম শেষে ওখান থেকেই আমরা কক্সবাজার বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। ব্যাগপ্যাকের কাজও রাতের মধ্যেই করে ফেল্লাম। সব মিলিয়ে রাতে একফোঁটা ও ঘুমাতে পারিনি যাইহোক রেডি হয়ে বাসে উঠলাম সবকিছু নিয়ে। বেচারা আঁচল ও রাতে ঘুমাতে পারেনি আমি আর ও পাশাপাশি বসলাম বাসে। আঁচল ঘুমাচ্ছিলো আর আমি ডেকে দিচ্ছি এই ঘুমাইসনা পড় একটু পরে পরীক্ষা। এই বলে কখন নিজেই ঘুমায়ে গেছি টের পাইনি জেগে দেখলাম ভার্সিটিতে চলে আসছি। বাস থেকে নেমে সবাই চা খেলাম আঁচলের সাথে একটু সময় পড়লাম। রিটেন এক্সাম, স্পটিং দিলাম, অ্যাসাইনমেন্ট কমপ্লিট করে সাবমিট করলাম। দেন লাঞ্চ করে আমাদের বাস চলল্ কক্সবাজারে। আমি অলমোস্ট পুরো জার্নিতে ঘুমাইছি, ইয়ারফোনে গান চলছিলো। খুবই শান্তির একটা ঘুম ছিল। হোটেলে পৌঁছাতে ৮-৮.৩০ বেজেছে ফরমালিটিজ শেষ করে রুমে গেলাম গোসল সেরে রাতের খাবার খেয়েই ঘুম যেহেতু সবাই অনেক ক্লান্ত ছিল। তখনো সূর্য ওঠেনি ফ্রেন্ড তাড়াহুড়ো করে ডাকছিল, উঠে পর রেডি হয়ে নে। ঝটপট রেডি হয়ে অটো নিয়ে লাবনি পয়েন্ট চলে গেলাম। আমরা বীচে হাটলাম, পানিতেও একটু ভিজেছি হালকা পাতলা এন্ড সেলফি, ফটোসেশান হলো। দেন সুন্দর সুন্দর শেল কুড়িয়েছিলাম। রুমে ব্যাক করে ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খেলাম। তারপর বাংলাদেশ এটোমিক এনার্জি কমিশনে নিয়ে গেলেন ওখানে ক্লাসের মধ্যে আমি ঘুমাচ্ছিলাম কিছুতেই চোখ খোলা রাখতে পারতেছিলাম না। যাইহোক আমাদের ক্লাস নিলেন দেন ওনাদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এন্ড এভরিথিং দেখালেন ডেসক্রাইভ করলেন, ফটোসেশান হলো। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল বলাকা হ্যাচারি লিমিটেড, উখিয়া কক্সবাজার। ঐদিন প্রচন্ড গরম ছিল, আমরা হেটেলে এসে দুপুরের খাবার খেয়েই বীচে চলে গেলাম সবাই। অনেকেই নামবেনা বাট এক এক করে সবাই নেমে গেল। আচ্ছা এখানে একটা কথা বলে রাখি বীচে যাওয়ার সময় ফোন পার্স রুমে রেখে যাওয়াই উত্তম। না হলে সমুদ্রে নামার সময় মানুষ খুজতে হবে ঝামেলায় পরবেন, আমি তো স্যন্ডেল ও রেখে যেতাম। প্রথম দিন গুলাতে জিন্স পরে সমুদ্রে নেমেছিলাম দেন শুখাইতে ঝামেলা হয়েছিলো। পরেরদিন আমরা গেলাম বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ওখানে লেকচার সেশন শেষে তাদের সংরক্ষিত বে অব বেঙ্গলের সকল বায়োলজিক্যাল স্পেসিস দেখালেন প্লাস তাদের ইন্সট্রুমেন্টস এবং ব্রিফলি ডেসক্রাইভ করলেন সবকিছু সম্পর্কে। সকালে তারা ব্রেকফাস্ট করিয়েছিলো এন্ড ফ্রেশ মাছ, ভাত ডাল দিয়ে লাঞ্চ ও করিয়েছিলো।

আমাদেরকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে বিভিন্ন স্পটে নামিয়ে জিওলজিকাল ফিচার গুলো দেখিয়ে ওগুলো সম্পর্কে ডিটেইলস লেকচার দিতেন। এইসময় গুলোতে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে গেছিলো অনেক রোদ আর তার মধ্যে বীচে দাড়ায় লেকচার শোনা এন্ড নোটস্ তোলা লিটল বিট টাফ। এইরকম অনেকগুলো জায়গায় নিয়ে গেছিলো তারমধ্যে একটা জায়গা ছিলো নোয়াখালী ছড়া। অনেক পথ হেটেছিলাম আমরা। দেন প্রত্যেক দিনই আমরা বীচে যেতাম হোটেলে ব্যাক করার পর। সমুদ্রে নেমে একজন আরেকজনের হাত ধরে রাখতাম বিভিন্ন রকমের ওয়েভ আসত হাই বাজেট, লো বাজেট আর জাম্প করতাম। আমি একবার ওয়েবের মধ্যে পড়ে ডুবে গেছিলাম মনে হয়েছিল আমার জীবন এখানেই শেষ, এই সুন্দর পৃথিবী আর দেখতে পাবোনা। লিটারালি ফ্রেন্ডের হাত থেকে ছুটে গিয়ে ওয়েবের সাথে রোল খেয়েছিলাম লাকিলি মারাত্মক কিছু হয়নি। লাস্ট দিন মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ গেছিলো পথে যদিও বিভিন্ন যায়গায় নামিয়েছিল বাট জার্নিটা বেস্ট ছিল। একপাশে সমুদ্র অন্যপাশে পাহাড় আর জার্নির সময় বেশ বাতাস লাগছিল এবং মনে হয়েছিল হাওয়ায় ভাসছি। টেকনাফে ও আমরা অনেক কিছু শিখেছিলো জিওলজিকাল বৈশিষ্ট্য এবং কোরাল রিফ নিয়ে। এবং ফাইনালি আমাদের ফিল্ড ট্রিপ জার্নির সমাপ্তি ঘটলো। আমরা হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে হান্ডিতে সবাই ডিনার করলাম। দেন কিছু কিনাকাটা করলাম কক্সবাজার থেকে, রাতে লেইট হয়ে গেছিলো আমরা লুকায়ে লুকায়ে হোটেলে ডুকেছিলাম। এইতো আবারো চিটাগংকে আমাদের বাই বাই বলে ঢাকা ফিরতে হলো।

মেহের আবজুন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি
ডিপার্টমেন্ট অব ওশানোগ্রাফি এন্ড হাইড্রোগ্রাফি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *