ঢাবি অধ্যাপক শামসুল হক মা‌েল্লার মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া

স‌ৈয়দ ফারুক হা‌েসেন: না ফ‌েরার দশ চল‌ে গ‌েল‌েন শিক্ষার আ‌লাে ছড়ানা‌ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শামসুল হক মা‌েল্লা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র গণিত বিভাগর সাব‌েক অধ্যাপক, সিন‌েট সদস্য, বাংলাদ‌েশ গণিত সমিতির সাব‌েক সাধারন সম্পাদক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, সমাজস‌েবক, মুক্তিযুদ্ধর অন্যতম সংগঠক প্রফ‌েসর শামসুল হক মা‌েল্লা গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়া‌রি) সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬ টায় ঢাকার শ্যামলী সেন্ট্রাল হসপিটাল‌ে শ‌েষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করন। (ইনা লিল্লাহি ওয়া ইনা ইলাইহি রাজিউন)।

মৃত্যুকাল তার বয়স হয়‌েছিল ৯০ বছর। সমগ্র জাতি তাঁর বিদ‌েহী আত্মার শা‌ন্তি ও শোকসপ্ত পরিবার‌ের প্রতি গভীর সমব‌েদনা জ্ঞাপন করছ‌ে। পর‌দিন (বুধবার) ফজর‌ের পর ধানমন্ডি নিজ বাসার নিকটস্থ মসজিদ‌ে, সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ ও ঢাবির মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং বিকাল ৩ ঘ‌টিকায় নিজ‌ের হাত‌ে গড়া প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার মুবাদনগর‌ে চাঁদ মিয়া মা‌েল্লা ডিগ্রি কল‌েজ মাঠ‌ে জানাজার নামাজ অুন‌ষ্ঠিত হয়। জানাজা ‌শেষ‌ে পারিবারিক কবরস্থা‌নে দাফন করা হয়। তিনি স্ত্রী, তিন ছ‌েলে, এক ম‌েয়‌েসহ অসংখ্য গুনীগ্রাহী ও শুভানূধ্যায়ী র‌েখ‌ে গ‌েছ‌েন। তার মৃত্যুতে পরিবারসহ দ‌েশজুড় বইছ‌ে শা‌েক‌ের ছাঁয়া।

ব্যক্তি জীবন‌ে শিক্ষা উন্নয়ন ও মানবস‌েবায় তিনি ছিলন নিরলস নিঃস্বার্থ। অধ্যাপক শামসুল হক ছিল‌েন একজন নিব‌েদিতপ্রাণ; শিক্ষক ও গব‌েষক। গাণিতিক বিষয় তিনি ছিল‌েন বিশ‌েষজ্ঞ। দক্ষ ও সুনাগরিক গড়‌ে তুলত‌ে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প ন‌েই। এই বিষয়টি উপলব্ধি কর‌েই তিনি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য এবং শিক্ষার্থীদ‌ের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়‌েছ‌েন এবং প্রতিষ্ঠা কর‌েছ‌েন স্কুল কল‌েজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

একজন গণিত শিক্ষক‌ের চিরায়িত গুণাবলী তার মধ্য ছিল‌ো। তিনি ছিল‌েন সৎ, বিনয়ী, স্পষ্টভাষী, পরা‌েপকারী ও মানবিক মূল্যবাধ সম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন খ্যাতিমান গণিতবিদ। বাংলাদেশ গণিত সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন গুরুত্বপূর্ণ পদ তিনি সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথ দায়িত্ব পালন কর‌েছ‌েন। স্কুল, কলজ, মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টন, ক্লিনিকসহ অনক প্রতিষ্ঠান‌ের প্রতিষ্ঠাতা এই গুণী শিক্ষাবিদ। তিনি মানবসবা ও শিক্ষাবিস্তার‌ে অসামান্য অবদানর‌ে জন্য স্মরণীয় হয় থাকব‌েন। তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কল‌েজ (বর্তমান জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়) -এর গণিত বিভাগ‌েও শিক্ষকতা করছ‌েন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা‌েগদান‌ের পর থ‌েক‌েই অবহ‌েলিত গ্রামক‌ে এগিয় ন‌েওয়ার জন্য সংগ্রাম চালিয় যান তিনি। নিজের গ্রাম‌ে প্রতিটি দরিদ্র মানুষ‌ের কাছ‌ে তিনি ছিল‌েন আশার আলা‌ে। ঢাকা থ‌েক‌ে কুমিল্লা লা‌েকাল বাস‌ে কষ্ট কর‌ে গি‌য়ে বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়‌ে তুল‌েছ‌েন। স‌েগুলা‌ের মধ্য‌ে উল্ল‌েখ্যযা‌েগ্য-চাঁদ মিয়া মা‌েল্লা ডিগ্রী কলজ, আলীরচর, মুরাদনগর, কুমিল্লা, তায়মাস ব‌েগম উচ্চ বিদ্যালয়, আলীরচর, মুরাদনগর,কুমিল্লা,আফরাজা হক কিন্ডারগার্ট‌েন, আলীরচর, মুরাদনগর, কুমিল্লা, তায়মাস-অফুলা ইবত‌েদায়ী মাদ্রাসা, আলীরচর, মুরাদনগর, কুমিল্লা, হক কমিউনিটি ক্লিনিক, আলীরচর, মুরাদনগর, কুমিল্লা ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি মুরাদনগর, হামনা, তিতাস উপজলার প্রায় ৪০টি গ্রাম সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়‌ে গিয়‌েছেন। তিনি লিবিয়ায় একটি ইউনিভার্সিটিত‌েও কিছুদিন শিক্ষকতা কর‌েছেন। দ‌েশ‌ে ফির‌েই জীবন‌ের কঠা‌ের পরিশ্রম‌ের সামান্য আয়‌ে চারিদিক শিক্ষার ব্রত ছড়িয়‌ে দিত‌ে প্রথম‌েই ১৯৯৫ সাল প্রতিষ্ঠা করন চাঁদ মিয়া মাল্লা ডিগ্রি কলজ। পরবর্তীত শিক্ষার মান উনয়ন‌ে গ্রাম‌ের অবহলিত গরীব জনগাষ্ঠীর কথা চিন্তা কর‌ে গড়‌ে তাুল‌েন প্রফ‌েসর শামসুল হক মা‌েল্লা ট্রাস্ট। ট্রাস্ট‌ের মাধ্যম‌ে গড়‌েছ‌েন অসংখ্য ক্লিনিক, গণ পাঠাগার, ছাত্রাবাস, ইদগাহ, মসজিদসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। গ্রাম‌ের অসহায় মানুষ‌ের ভাগ্য উন্নয়ন‌ের জন্য হাত‌ে নিয়েছেন আদর্শ গ্রাম প্রকল্প। তাক‌ে সমাজ‌ে অসামান্য অবদানর জন্য ২০০৯ সাল‌ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আন্তর্জা‌তিক “ডিষ্টিংগুইশড লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড”, ২০০৭ সাল বাংলাদ‌েশ এসাসিয়‌েশন ফর টা‌েটাল সা‌েসাল এডভান্সম‌েট কর্তৃক “সেরা-স‌েবক” পুরষ্কার, ২০০৮ সাল‌ে বাংলাদ‌েশ গণিত সমিতি কর্তৃক “বর্ষীয়ান গণিতবিদ সম্মাননা”, ২০১৬ সাল‌ে কুমিল্লা ভিক্টারিয়া কল‌েজ গণিত বিভাগ কর্তৃক “আজীবন সম্মাননা” সহ অসংখ্য সম্মাননা ও পুরষ্কারে ভূষিত হন। বর্তমান সমাজ‌ে আমারা হয়‌ে উঠছি আত্মক‌েদ্রিক। আমরা সর্বদাই নিজ‌েক‌ে নিয়‌ে ব্যস্ত। প্রফসর শামসুল হক মা‌েল্লা ছিল‌েন সবার থ‌েক একটু আলাদা। তিনি মানুষর উপকার‌ের জন্য অন‌েক পরিশ্রম কর‌েছ‌েন এবং সফলও হয়‌েছ‌েন। প্রকৃত মানুষ হত‌ে হল‌ে আমাদ‌ের চাই পরস্পরর প্রতি ভালােবাসা, চাই সহ মমতা, স্বার্থপরতাহীনতা। যার পুরাটাই ছিল প্রফেসর শামসুল হক মা‌েল্লা চারিত্রিক ব‌ৈশিষ্ট্য‌ের মধ্য‌ে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার কাছ‌ে সমভাব জনপ্রিয় ছিল‌েন। ভদ্রতা ,বিনয়ী, মানবতা অন্যকে সাহায্য করা, অন্য‌ের ক্ষতির চ‌েষ্টা বা ক্ষতির কামনা না করা- এসব বশিষ্ট্য সম্পন একজন ভালা মন‌ের মানুষ ছিলন তিনি। শ্রমজীবী মানুষ যখন বিপদাপন্ন, তখন সমাজ‌ের বিত্তবান ব্যক্তিদ‌ের দুর্দশাগ্স্থে মানুষ‌ের পাশ‌ে দাঁড়ানা‌ে অবশ্যই কর্তব্য। অসহায় মানুষর দুর্দিন‌ে তাদ‌ের সর্বপ্রকার আর্থিক সহায়তা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, চিকিৎসাসবা ও শুশ্রষায় এগিয় আসায় তিনি ছিলেন সবসময়ই অগ্রসর। একজন ভালা‌ে মানুষ সহজ‌েই অন্যদর সঙ্গ‌ে মিশত‌ে পার‌ে। তিনি সবার প্রতি দয়াশীল এবং ভদ্র স্বভাব‌ের ছিল‌েন। তিনি নিজর আবগ অনুভূতিক সবার কাছ প্রকাশ না কর‌ে লুকিয় রাখত‌ে ব‌েশি পছদ কর‌েন। আমরা সবাই ভীষণ ভাব‌ে মর্মাহত। আমাদ‌ের সবার সম্মান‌ের এবং শ্রদ্ধার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র গণিত বিভাগর অধ্যাপক শামসুল হক মা‌েল্লা মানুষ‌ের ভালাবাসা নিয়‌ে পৃথিবীর সমস্ত দ‌েনা মিটিয় অসীম‌ের উদ্দশ্য‌ে চল‌ে গিয়‌েছ‌েন। তিনি একজন আদর্শ মানুষ‌ের প্রতিছবি ছিল‌েন। অসংখ্য মানুষ‌ের সাহায্য সহযাগিতায় তিনি ছিল‌েন সর্বদাই নিব‌েদিত। সারাটা জীবন ব্যয় কর‌েছ‌েন জনগণর প্রকৃত স‌েবায়, যেখান ছিল না কা‌েন‌ো স্বার্থ। এমন মানুষ‌ের অভাব বা‌েধ করছ‌ে পথিবী। তার মত্যুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়‌ের উপচার্য অধ্যাপক ডা. মা‌ে. আখতারুজ্জামান, দ‌েশ‌ের বিভিন বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষকগণ, রাজনীতিবিদ, বিভিন সামাজিক সংগঠনগুলা গভীর শা‌েক প্রকাশ কর‌েছ‌েনরের্কীতিমানের মৃত্যু নাই। দ‌েশর সাধারণ মানুষ‌ের স‌েবায় আত্মনিয়া‌েজিত এ ধরণ‌ের ক্ষণজন্মা মানুষ‌ের জন্যই পথিবী এতটা আলাকিত। ওপারে ভালা থাকুন হে মানবহিতষী।

অধ্যাপক শামসুল হক মা‌েল্লার সা‌থে জাগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড‌েপুটি র‌েজিস্ট্রার স‌ৈয়দ ফারুক ‌হো‌সেন

‌লেখক: ড‌েপুটি র‌েজিস্ট্রার, জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *