বিভ্রান্তিকর সংবাদের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির বক্তব্য ও প্রতিবাদ

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

অনিয়ম দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে নোয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” শিরোনামে দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(নোবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে শিক্ষক সমিতি এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। পাশাপাশি তারা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে ওই বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত “অনিয়ম দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে নোয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” শিরোনামে প্রতিবেদনটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই প্রতিবেদনের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রকৃতপক্ষে একটি কুচক্রী মহলের সরবরাহকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান মাননীয় উপাচার্য মহোদয় যোগদানের পর থেকে সততা, কর্মনিষ্ঠা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে। করোনা মহামারিতে যখন শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছিল, তখন মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং সম্মানিত শিক্ষকদের দক্ষতা ও আন্তরিক সহযোগিতায় অনলাইনে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণা চলমান রাখা ও দুইটি সেমিস্টার সম্পূর্ণ হয়েছিল। এরই সুফলে সম্প্রতি প্রকাশিত স্পেনের সিমাগো ইন্সটিটিউট র‍্যাংকিং-২০২২ এর তালিকায় দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে নোবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির প্রতিবেদনেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‍্যাংকিং-এ নোবিপ্রবির অবস্থান ছিল চতুর্থ।

প্রতিবেদনে মাননীয় উপাচার্য ক্যাম্পাসে অবস্থান করা নিয়ে যে,তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক। প্রকৃত অর্থে, মাননীয় উপাচার্য মহোদয় যোগদানের পর থেকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান করে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বরং করোনা মহামারীর ভয়াল সময়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন এবং দুই দুইবার করোনায় আক্রান্ত হন। এছাড়াও মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসে কভিড ল্যাব স্থাপন ও করোনা টেস্টে শতভাগ সাফল্য নিশিত করে করোনাকালীন সময়ে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে নোবিপ্রবি।

প্রতিবেদনে উপস্থাপিত বাড়িভাড়া ভাতা বাবদ উপাচার্য মহোদয়ের অর্থগ্রহণের তথ্যটি বিভ্রান্তিমূলক এবং প্রকৃত সত্য হচ্ছে তিনি যোগদানের পর থেকে বাড়িভাড়া ভাতা বাবদ কোন অর্থ গ্রহণ করেননি। প্রতিবেদনে রিজেন্ট বোর্ড সদস্য নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতার যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ৫৪তম একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একজন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য মনোনয়ন করা হয়।

প্রতিবেদনে অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থবিরতা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা কল্পনা প্রসূত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উল্লেখ্য যে, অবকাঠামো উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া, তার পরেও উপাচার্য মহোদয় যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। উপাচার্য মহোদয় যোগদানের পর থেকে দুটি শিক্ষার্থী আবাসিক হল, শিক্ষক-কর্মকর্তা ১০তলা আবাসিক ভবন, ১০তলা প্রভোস্ট আবাসিক ভবন, BNCC ভবন, কেন্দ্রীয় মসজিদ, উপাসনালয়, কেন্দ্রীয় পানি শোধনাগারসহ ওভারহেড ট্যাঙ্ক স্থাপন ও মেডিক্যাল সেন্টার এর কাজ সম্পূর্ণ সমাপ্ত করে ব্যবহার উপযোগী করা সহ সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়কে নেটওয়ার্কিং এর আওতায় এনেছেন।
উক্ত প্রতিবেদনে অডিট রিপোর্ট সম্পর্কে যে বিষয়টি বলা হয়েছে তা উদ্যেশ্যপ্রনোদিত বরং পূর্বের অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চলছে।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে সাম্প্রতিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং সত্যের অপলাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক অনুমোদনকৃত নিয়োগ নীতিমালা অনুসারে প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়; ফলে, শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা ‘স্ট্যান্ডার্ড’ নয় বলে প্রতিবেদনে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা অবান্তর। নীতিমালা অনুসারে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রত্যাশীদের মধ্য হতে যোগ্যতর প্রার্থীদের বাছাইয়ের পর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়; দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ, গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে, যেখানে কারও ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দের উপর ভিত্তি করে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রভাবান্বিত করার কোন সুযোগ নেই। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক নিয়োগে সেরা প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, যাদের সকলেই মেধার প্রখর স্বাক্ষর রেখে স্ব স্ব বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেই নিয়োগের জন্য বিবেচিত হয়েছেন।

বর্তমান উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে এপ্রিল মাসে সকল প্রকার নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এর ফলে দীর্ঘ দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল নিয়োগ বন্ধ থাকায় শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। উপরন্তু উচ্চশিক্ষার্থে অনেক শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে যাওয়ায় সীমিত সংখ্যক শিক্ষক নিয়ে বেশীরভাগ বিভাগেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরুহ হয়ে পড়ে। মাননীয় উপাচার্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা সম্ভব হয় এবং যার ফলশ্রুতিতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়। মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে এবং বিভাগসমূহের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়, তাই ‘অতিরিক্ত’ সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন এবং এই অল্প সময়েই ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীগণ দ্বারা সমাদৃত হয়েছেন। সুতরাং নতুন শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে অন্য শিক্ষকদের অসন্তোষের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার অপচেষ্টা বলেই প্রতীয়মান হয়।

তাই সকলের জ্ঞাতার্থে আমরা বলতে চাই, বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত সংবাদ যেন আর পরিবেশন করা না হয় সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমরা সকলে বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ তথা দেশের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করি। পরিশেষে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশিত হলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি এবং মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য সরবরাহকারী কুচক্রী মহলের মুখোশ উন্মোচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *