নানা আয়োজনে জবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

রুদ্র দেব নাথ, জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, নাটক প্রদর্শনী, সংগীত পরিবেশনা ও আলোচনা সভা সহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়েছে।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনর্মিত, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। এরপর সকাল ৯টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত), ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল, সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলো পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.মো. লুৎফর রহমান,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নিচতলায় চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে শিল্পকলা প্রদর্শনী, সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সংগীত পরিচালনা এবং নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনা ‘স্যার, একটু বাইরে আসবেন?’ প্রদর্শিত হয়েছে।

বেলা ১১.৩০ এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সংগীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে আলোচনা সভার কার্যক্রম শুরু হয়। সভার শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনার সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ এর সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ও বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ নূজহাত চৌধুরী।

অধ্যাপক ডাঃ নূজহাত চৌধুরী বলেন, ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর এক লজ্জাজনক হার হয়েছে। আর সেই লজ্জার প্রতিশোধ নিতে তারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। আর ক্ষমতায় বসিয়েছে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতকে। তারা ধর্মীয় পরিচয়কে জাতি পরিচয়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে চায়, যেন তাদের স্বার্থসিদ্ধি হয়। ত্রিশ লক্ষ শহীদের বদলে তিন লক্ষ শহীদ বানাতে চায়, যেন তাদের পাপকর্ম ঢাকা পড়ে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কথা বললে পলিটিকাল গেম শুরু করে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা দলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রেখে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে,কিন্তু মুখোশ বদলালেই কি পার্টি বদল হয়ে যায়? সব পার্টির সকল রাজনীতিবিদ এখন ইসলামকে ব্যবহার করেন। প্রতিটি ধর্ম মানুষকে ভালবাসার কথা বলে। কিন্তু তারা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বানাতে চান। ধর্মের ভিত্তিতে কোনো দেশ হতে পারে না। ভাইয়ের বুকে ভাই হয়ে ছুরি চালাবেন না। এই দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলের সমান অধিকার। দেশের মুক্তিযুদ্ধের শত্রুকে নিজেদের শত্রু ভাবতে হবে যেন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে।

আলোচনা সভায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে দেশকে মেধাশূন্য করার প্রচেষ্টার ফলে দেশের বিশাল ক্ষতি করে দিয়েছে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীরা। তাই শিক্ষকদের উচিত পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া ও শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। তারা তাদের এ দেশীয় দোসরদের নিয়ে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু মানুষকে হত্যা করে। বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের পর রাজধানীর রায়েরবাজার ইটখোলা ও মিরপুরের বধ্যভূমিসহ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের চোখ-হাত বাঁধা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *