বাংলাদেশর সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক ‘প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ’। যা ১৯৬৩ সালের ২২ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এটি ছিল জগন্নাথ কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ এরপর ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর এর নামকরণ করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ রচিত করেছে এক সোনালি ইতিহাস। বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চল ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু যার সূতিকাগার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার ডেন থেকেই। প্রতিষ্ঠাকালীন রোভার স্কাউট লিডার ছিলেন জনাব বোরহান উদ্দিন এবং সিনিয়র রোভার মেট ছিলেন আব্দুর রহিম। প্রতিষ্ঠাকালীন গ্রুপ সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক সাইদুর রহমান।
বর্তমান গ্রুপ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক। গ্রুপ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান খন্দকার এলটি। বর্তমান গ্রুপে রয়েছে ২০টি রোভার ইউনিট এবং ২ টি গার্ল-ইন- রোভার ইউনিট। গ্রুপে ইউনিট ভিত্তিক প্রয়োজন সংখ্যক রোভার স্কাউট লিডার এবং সিনিয়র রোভারমেট রয়েছেন এবং প্রায় সাড়ে চারশত এরও অধিক রোভার রয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছর প্রায় ১শত নবীন সহচরকে দীক্ষা প্রদান করে। রোভারিং কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত হয়েছে ‘রোভার-ইন-কাউন্সিল’ যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস ঢাকা জেলা রোভারের বর্তমান সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম এবং সেক্রেটারি ছিলেন শ.ম. এনামুল হক পি আর এস। বর্তমান সভাপতি এবং সেক্রেটারি হিসেবে আছেন এস কে জামিরুল এবং হোসাইন মুহম্মদ গোলাম রাজিক।
স্কাউট আন্দোলনের মূল লক্ষ হচ্ছে শিশু, কিশোর ও কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক গুণাবলী উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবার, সমাজ দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। রোভার স্কাউটদের মটো বা মূলমন্ত্ৰ হচ্ছে সেবাদান। এই লক্ষকে সামানে রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা ক্যাম্পাসের ভিতরে এবং বাহিরে বিভিন্ন সেবামুলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করেছে। রক্তদান কর্মসূচি, অগ্নিনির্বাপন, শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, কোভিড-১৯ এ মাস্ক বিতরণ এবং করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে আসছে। এছাড়াও দেশের বাহিরে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার জন্য এ গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, জাপান, থাইল্যাণ্ড, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, সিংগাপুর, শ্রীলংকা, নেপাল, ভারত, মিশর সহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। ১৯৮০ সালে ২য় রোভার ইউনিট হিসেবে সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প “পূর্বগ্রাম রোভার পল্লী কার্যক্রম শুরু করে। রোভার স্কাউটদের সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন এই গ্রুপের ৩০ জন রোভার। যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বাধিক। এর মধ্যে স্বাধীনতার পূর্বে ‘কায়েদ-এ-আজম রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন ৪ জন এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন ২৬ জন রোভার। এছাড়াও ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ ৪৫ জন, ‘নম্বর টু দি ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ ২ জন, ‘গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ ৩ জন, ‘সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড ৬ জন রোভার অর্জন করেছেন। অত্র গ্রুপের রোভার লিডারগন বিভিন্ন সময়ে “ন্যাশনাল সার্টিফিকেট, ‘দি মেডেল অব মেরিট এবং ‘সি এন সি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। বর্তমানে গ্রুপে দুই জন উড ব্যাজধারী রোভার স্কাউট লিডার রয়েছেন, অধ্যাপক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান খন্দকার এলটি এবং ড. মোঃ মিন্টু আলী বিশ্বাস। দেশের স্বনামধন্য রোভার স্কাউট গ্রুপ হিসেবে যেমন রয়েছে নানান অর্জন তেমনি এর প্রাক্তন রোভারগনজেলা রোভার স্কাউট, রোভার অঞ্চল ও বাংলাদেশ স্কাউটসের বিভিন্ন গুরত্বপুর্ণ পদে সমাসীন রয়েছেন।
উল্লেখ্য যে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. অত্র গ্রুপের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে সাবেক ও বর্তমার রোভারদের মিলনমেলা হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের উল্লেখযোগ্য কিছু সেবামুলক কার্যক্রম
বার্ষিক শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ প্রতিবছরই দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কওে থাকে । বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ কালেকশন করে শীতবস্ত্র ক্রয় করে ক্যাম্পাসে এবং যেসকল এলাকায় শীতের প্রকোপ বেশি সেসব এলাকায় গিয়ে বিতরণ করে। এরি ধারাবাহিকতায় এ বছরের জানুয়ারিতে ক্যাম্পাসের কর্মচারী এবং রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে কম্বল এবং চাদর বিতরণ করা হয়।
ভর্তিযুদ্ধে দায়িত্ব পালন: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে আসে। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে সুশৃঙ্খলভাবে ঢুকানো, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য যাবতীয় নির্দেশনা প্রদান। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রমে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
অগ্নিনির্বারণ কাজে অংশগ্রহণ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা কোথাও আগুন লাগার সংবাদ পেলে সাথে সাথে ছুটে গিয়েছে আগুন নিভাতে। জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা সেখানে কাজ করেছে। ২১শে ফেব্রুয়ারী মধ্য রাতে চকবাজার ট্র্যাজেডির সাক্ষী হয়ে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী রোভারগণ। দুই সাহসী রোভার মোঃ এনামুল হাসান কাউসার এবং রোভার মোঃ আহসান হাবীব খবর পাওয়ার সাথে সাথে ছুটে যান ঘটনা স্থলে। সারারাত ধরে অগ্নিনির্বাপণে সহযোগিতা, শৃঙ্খলা রক্ষা, স্ট্রেচাওে লাশ বহন ও সনাক্তকরণে সার্বিক সহযোগিতা করেন। ঘটনার পরদিন প্রায় ২০ জন রোভার সেখানে কাজ করেন। গত ২৬ মার্চ ২০২১ নারায়ণগঞ্জের এক কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। রাতেই সেখানে ছুটে যান একজন সাহসী রোভার আনোয়ার হোসেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তারা মানুষের সেবায় তারা নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।
ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম ও কোভিড-২০ সচেতনতামূলক কর্মসূচি : ২০২০ সালে বিশ্বের বুকে নেমে আসে এক ভয়াবহ দুর্ভোগ। করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকে কুপোকানাত করে ফেলে। এ সময় ঝুঁকি নিয়ে রোভার সদস্যরা করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি এবং মাস্ক বিতরণ কর্মসুচি পালন করে। এরপর সরকারের গণভ্যাকসিন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা অভিযান: বিভিন্ন সময় নিজ ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাহিরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে থাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সেবামূলক কাজে সাহসীকতার সাথে কাজ করে থাকেন। স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিভেন্সন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল এর বিখ্যাত উক্তি ‘তুমি পৃথিবীকে যেভাবে পেয়েছ তার চেয়ে আরও সুন্দর করে রেখে যাও” কে ধারণ করে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে কাজ করে। সর্বদা স্কাউট আইন মেনে চলতে বদ্ধপরিকর।
নাহিদ হাসান রাসেল
সিনিয়র রোভারমেট ও সহসভাপতি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ