আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ৫২ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস আজকের এই বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে আমরা যত আয়োজনই করি না কেন, যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করার ঋণ শোধ হবে না কিছুতেই। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর যে বিজয় এসেছিলো, তার শুরুটা হয়েছিলো এই দিনেই। এ দিনেই বাঙ্গালী জাতিসত্তাকে বিশ্ব নতুন করে দেখতে পেয়েছিলো। এ দিনেই স্বাধীনতার প্রশ্নে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। জাতীয় জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে এই দিনটির প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি , সংস্কার ও অর্জনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা ইন্টারনাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন ফরহাদ হোসেন।
বিজয়ের উল্লাসের মাঝে হারানোর বেদনাও রয়েছে
আমার কাছে স্বাধীনতা মানে অধিকার আদায়ের দ্বার উন্মুক্ত। বাঙালি হিসেবে আমার ভাষার অধিকার, দেশপ্রেমিক হিসেবে সাংবিধানিক অধিকার আদায় আমার হক। বিশ্বব্যাপী আমার জাতিসত্বার আনন্দ, উল্লাসের ও গর্বের জন্য বিশেষ একটি দিন স্বাধীনতা দিবস। বিজয়ের হাসি খুশির মাঝে কল্পনায় আমাদের হারানোর বেদনাও রয়েছে।

স্বাধীনতা দিবস মানে হলো দায়িত্ব, আদর্শ ও ন্যায়-নীতির চেতনাকে আরও একটি বছরের জন্য নিজের মাঝে জাগ্রত করার সুযোগ। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান শক্তি হলো তরুণ সমাজ। স্বাধীনতা পরবর্তী এই সময়ে দেশের সার্বিক অর্জনে তরুণরা বরাবরই সম্মুখ সারির যোদ্ধা। রাষ্ট্রবিরোধী যেকোনো শক্তির বিরুদ্ধে তরুণদের সবার আগে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার নজির অহরহ। তবে একটা কথা বলতে চাই, আমরা কি আদৌ স্বাধীন!! বলছি এইজন্য না পারছি স্বাধীনভাবে বাচঁতে, না পারছি কথা বলতে, না পারছি প্রতিবাদ করতে, না পারছি নিজের মতামত প্রকাশ করতে!!
মাসউদ আহমেদ, অভিনেতা ও নাট্যকর্মী
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
তারুণ্যের হাতেই অর্পিত স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম
স্বাধীনতা এমন একটি শব্দ, যা একটি জাতির জীবনযাত্রাকেই বদলে দেয়। একাত্তরের ২৬শে মার্চ দিনটি বাঙালির ২৩ বছরের শোষণ দমনের পথে শেষের শুরু। যে অধ্যায়ে লেগে আছে দাঁত কামড়ানো মানসিকতা, যা ছিনিয়ে আনে বিজয়।

বর্তমান প্রজন্ম স্বাধীনতা শব্দটির মানে ভুলতে বসেছে। ত্যাগের মহিমায় ফের আলোকিত করতে হবে তরুণদের। তারুণ্যের হাতেই অর্পিত স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম। স্বাধীনতা দিবসের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে।
আমার চোখে স্বাধীনতা মানে শালীনতার সাথে নারীদের এগিয়ে চলা। নারীদের নিরাপদ এক রাষ্ট্রের নিশ্চয়তা প্রদান করা। স্বাধীনতা মানে, শ্রম ও সততার মিশেলে দেশ ও দশের সেবা করা। যে যেখানে আছি, যার যার জায়গা থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া। মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে লাল সবুজের বুকে ছড়িয়ে দিতে চাই জাগরণের সুর।
মোস্তাকিমা রহমান বিনীতা
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
স্বাধীনতার চেতনা আজ আমাদের প্রভাবিত করছে না
স্বাধীনতা মানে মুক্তি, ডানা মেলে বাঁচবার উল্লাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ অভিন্ন এক লক্ষ্য নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক হয়েছিল। বায়ান্ন বছর পরে এসে কি সেই ঐক্য ধরে রাখতে পেরেছি আমরা?

স্বাধীনতা দিবস আমাদের কাছে চেতনার স্তম্ভ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এই চেতনাকে আমরা অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছি, কৌশলে কিংবা অজ্ঞতায়। স্বাধীনতার চেতনা আজ আমাদের প্রভাবিত করছে না। যে লক্ষ্যে স্বাধীন হয়েছিলে এই বাংলা, আজ আর সেই লক্ষ্যে নেই আমরা। আজকের এই সোনালি বাংলার সকল অর্জনে রয়েছে তারুণ্যের জয়গান ও আত্মত্যাগ। আসলে তারুণ্যকে বয়সের সমীকরণে আনা যায় না। কিন্তু তরুণদের মাঝে তারুণ্য না থাকলে হয়তো দেশ সামনের দিকে এগোবে না, দেখবে না ৫২ এবং ৭১-এর মতো সফলতা। তাই তরুণদের মাঝে স্বাধীনতার চেতনা উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একাত্তরকে তুলে দিতে হিবে তরুণদের হাতে।
মোঃ সোহানুর রহমান
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
স্বাধীনতা আমাদের অহংকার, ত্যাগ, আনন্দ, উল্লাসের নাম
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ রক্তঝরা ইতিহাস। স্বাধীনতা বাংলা অক্ষরে লিখিত কোনো সাধারণ শব্দ নয়, নয় কোনো রাজনীতিবিদের বারংবার উচ্চারিত অনর্থক বাণী। এটা হল বাংলাদেশ নামক দেশটির নব সূচনার জন্য হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অনাচার দূরীকরণে শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্ষিতা নারীসহ আপামর জনসাধারণ ও কৃষকের ঘাম ঝরা শ্রমের সংমিশ্রণ।

এটা হল যুদ্ধ উত্তর দেশের কল্যাণকামী প্রতিটি নাগরিকের অকপটে কথা বলা, মুক্ত বিচরণসহ মৌলিক চাহিদার অবাধ বিন্যাসে সমন্বিত প্রত্যয়। স্বাধীনতা এখন গল্প, পাঠ্য বই, ইতিহাস ও পত্রিকা এমনকি প্রতি বছর এইদিনে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনেই আবদ্ধ যেটা স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বহন করেনা। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের অহংকার, ত্যাগ, আনন্দ, উল্লাসের নাম। আমি বিশ্বাস করি স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন তেমনি রক্ষা করাও কঠিন। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত দেশ গড়তে আমাদের সকলের যার যার অবস্থান থেকে সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকতে হবে।
মাহাথির মোহাম্মদ লিহান
শিক্ষার্থী, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ভিএস/ডব্লিউটি