করোনা চিকিৎসায় প্রতারণা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

বৈশ্বিক মহামারী করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিকে আরো করুণ করে তুলছে দেশের কিছু রাজনৈতিক লেবাসধারী মানুষ। যাদের কাছে মনুষ্যবোধের ন্যূনতম উপস্থিতি নেই। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য,আমাদের পুরো জাতির জন্য বড় লজ্জাকর। এতোদিন আমরা করোনা পরিস্থিতিতে অসহায়-দুঃখিদের ত্রাণ লুটের কথা, চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রিতে নয়-ছয়ের কথা শুনে আসলেও এবার কোভিড টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণার খবর দেশবাসীকে চরম হতাশায় ফেলেছে। চিকিৎসাসেবার মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এ মহামারীর সময়েও যেসব মানুষ প্রতারণা করে টাকা কামাতে পারে, তা বিস্মিত হওয়ার মতো বৈকি। আমরা মনে করি, করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট, সরকারের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার পরও রোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায়, সর্বোপরি করোনা পজিটিভকে নেগেটিভ ও নেগেটিভকে পজিটিভ রিপোর্ট দেয়ার মাধ্যমে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল ও এর মালিক নজিরবিহীন অপকর্ম করেছেন। এটি মানুষ হত্যা চেষ্টার অপপ্রয়াস বললে অত্যুক্তি হবে না। আমরা আশা করি, এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

কারণ, স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি তিনি বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এরই মধ্যে ইতালির সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে করোনার ভুয়া রিপোর্টের খবর প্রকাশিত হয়েছে এবং আমাদের যাত্রীবাহী বিমানকে ‘ভাইরাসবাহী বোমা’ অভিহিত করে একটি বিমানকে ইতালির বন্দরে নামতে না দেয়া এবং বিমানের ফ্লাইটআগামী অক্টোবর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে জানা গেছে। প্রতারণা, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ এবং স্বাস্থ্য খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ছাড়াও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য রিজেন্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রিজেন্ট হাসপাতাল স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।চোখের আড়ালে এমন অসংখ্য রিজেন্ট হাসপাতাল রয়েছে। সমূলে এসব উৎপাটন করতে হবে। সবচেয়ে বড়কথা হচ্ছে, রিজেন্ট এর মালিকের পরিবার হাসপাতালটির এ ধরণের অপকর্মে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। আমরা জেনেছি, এ হাসপাতালটির ২০১৪ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখনও নবায়ন করা হয়নি; এরমধ্যে অবৈধ একটি হাসপাতালকে কীভাবে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের মর্যাদা দেয়া হল, এ প্রশ্নেরও জবাব খুঁজতে হবে। এর পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
বস্তুত, করোনা মহামারী দেখিয়ে দিয়েছে, বিপদের সময় দরজা বন্ধ করে রাখলেও সুবিধামতো জনগণের গলা কাটাই বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের উদ্দেশ্য। এ মহামারীকালেই নকল মাস্ক সরবরাহ, ডাক্তার-নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ-পদায়নে দুর্নীতিসহ স্বাস্থ্য খাতের অনেক অনিয়ম প্রকাশ্যে এসেছে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালের কেনাকাটায় পুকুর চুরি, বেসরকারি হাসপাতালে লাশ আটকে রেখে বাড়তি অর্থ আদায়- এসব অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। প্রতারকদের একটি সাধারণ নিয়ম হচ্ছে- সমাজ, সরকার, রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রদর্শন করে মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করা এবং দিনশেষে প্রতারণা করে নিজেদের আখের গোছানো। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তার বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলোরও তদন্ত হওয়া উচিত। প্রতারণার দায়ে রিজেন্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনিয়ম-দুর্নীতি ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ড প্রয়োজনে নিরপেক্ষ অডিট-তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না হয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতকে করুনদশা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আমরা চাই, অপরাধি যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

লেখক-
র‌কিব হাসান লে‌নিন
সম্পাদক, ভোরের সংবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *