মঠবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ নেতার আবেগঘন স্ট্যাটাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান হেলাল, তাঁর নিজের ফেসবুক ওয়ালে ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাঁর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:

আমি খারাপ মানুষের গুন গাচ্ছি না আমি গুন গাচ্ছি ছাত্রলীগ নামের ওই ছেলেটির যারা মানুষের বিপদের সময় সকল বাধাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে আসে, আমি গুন গাচ্ছি ঐ ছাত্রলীগ কর্মীর যারা দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুহূর্তে ঘরে বসে না থেকে সাহায্য করার জন্য মানুষের দোরগোড়ায় এগিয়ে যায়, আমি গুন গাচ্ছি ঐ ছাত্রলীগ কর্মীর যারা সহায় সম্বলহীন অসুস্থ মানুষটিকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে, আমি গুন গাচ্ছি ওই ছাত্রলীগ কর্মীর যারা এই করোনা কালীন সময়ে যখন সবাই ঘরে বসে ছিল সেই সময় কঠিন বাস্তবতা মেনে নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জেনেও কর্মহীন অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন প্রতিটি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে। আমি গুন গাচ্ছি ঐ ছাত্রলীগ কর্মীর যারা মৃত্যুশয্যায় রক্তের অভাবে হাসপাতলে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তাদের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

 এত কিছু করার পরেও কোন একটা নামধারী ছাত্রলীগ নেতার কুকর্ম বাংলাদেশের সকল ছাত্রলীগ কর্মী তার দায়ভার নিতে পারেনা। সবার একটা কথা মনে রাখা উচিত হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান হয় না তেমনি ধানের মধ্যে চিটা থাকবে এটাই বাস্তবতা। আমরা বিভিন্ন সময় দেখি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগকর্মী এটা করেছে ওটা করেছে! কিন্তু কখনোই ছাত্রলীগ কর্মীর কোন একটি ভাল গুণ বাঁ দিক সাধারণ মানুষ বলেন আর বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া বলেন কেউ ভালোভাবে প্রকাশ করে না।

আজকে ঘরের শত্রু বিভীষণ। আওয়ামীলীগের গ্রুপিংয়ের কারণে আজকে ছাত্রলীগ যাঁতাকলে। কোন একটি পাড়া-মহল্লায় সামান্য ক্রিকেট খেলা বা ফুটবল খেলা নিয়ে যদি দুই দলের ভিতরে দ্বন্দ্ব হয় তার দায়ভার নিতে হয় ছাত্রলীগ কর্মী বা নেতার, কেন নিতে হবে? সামান্য এই খেলাধুলা নিয়ে দু’দলের দ্বন্দ্ব হলে কোন একটি দল আহত হলে সেই এলাকায় রাজনৈতিক গ্রুপিং থাকার কারণে একটি গ্রুপ সুবিধা নেওয়ার জন্য সেই আহতদেরকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে সেই এলাকার নেতৃত্ব স্থানীয় প্রতিটি ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা দিয়ে ভিন্ন রাজনীতির খেলা খেলে। এখন ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা দেওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের বাহিরে অন্য দলের প্রয়োজন হয় না আওয়ামীলীগ নেতারাই যথেষ্ট। এটাই যদি হয় নিজের দলের নেতাদের বৈশিষ্ট্য তাহলে অন্যদলের বা সাধারণ মানুষের ছাত্রলীগের প্রতি যে খারাপ মনোভাব সেটা থাকাই বাস্তবতা সেটা দোষের কিছু না। কারণ নিজের দলের নেতারাই তো ছাত্রলীগের নামে মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষ বলেন আর অন্য দলের লোক বলেন তাদের চোখে খারাপ সাজিয়েছে। কারণ ছাত্রলীগের নামের এই খারাপ সার্টিফিকেট নেতারাই  ছাত্রলীগের পিছনে ঝুলিয়ে দিয়েছেন অথচ সেই ছাত্রলীগ কর্মী কিছুই জানেনা।

নেতাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্য একটি পক্ষ কে ঘায়েল করার জন্য এভাবে একটি ছাত্রলীগ কর্মী সাধারণ মানুষের কাছে খারাপ সাজে। কিন্তু উপজেলা থেকে জেলা তারপরে কেন্দ্রীয় নেতারা কি কখনো খুঁজে দেখেছেন এগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায় কী। পরিত্রাণের পথ কিভাবে খুজে পাবেন, আপনারা যাই করেন আপনাদের আশেপাশে থাকা কয়েকটি চামচারা আপনি ভালো করলেও ভালো বলে আর খারাপ করলেও ভালো বলে কেউ আপনাদের ভুল জিনিসটা ধরিয়ে দেয় না। আজকে প্রতিটি ইউনিটে নিজের দলের গ্রুপিংয়ের কারণে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিথ্যা মামলার আসামি কই নেতৃত্ব স্থানীয় নেতারা কখনো কি জেনে দেখেছেন কি কারনে মামলাগুলো হয়েছে বা কেন হয়েছে। একটা সত্যি কথা কি যারা নেতৃত্বে থাকে তারাই শুধু ভালো থাকে অন্যরা কেউ ভালো থাকে না। তাই যারা ভালো থাকে তারা আরাম আয়েশে থাকায় সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে খারাপ থাকা কর্মীদের কথা ভুলে যায়।

বর্তমান রাজনীতিতে সত্য কথা বলার সৎ সাহস কম নেতা-কর্মীরই আছে, সবাই যেন জোয়ার ভাটায় ঘা ভাসিয়ে চলে। আজকের ছাত্রলীগের যতটুকু অর্জন এগুলো শুধু তৃণমূলের কর্মীদের জন্যই হয়েছে কিন্তু সুফল ভোগ করছে কারা আরাম আয়েশে থাকা নেতাকর্মীরা। নেতাদের কাজ হল ফেসবুকে একটা প্রেস রিলিজ করা, হোক সেটা বহিষ্কার বা কমিটি গঠন। এইতো হরহামেশা এটাই চলছে। আরে তৃণমূলের প্রতিটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে আপনাদের সাথে দেখা করার জন্য আপনাদের নাগাল পাওয়া কি সম্ভব? যারা নেতৃত্ব স্থানীয় রাজনীতি করছেন। বরং আপনাদের উচিত কি জানেন? যখন কোন ছাত্রলীগকর্মী কোন ঝামেলায় পড়ে বা কোন এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা সংঘটিত হয় তখন সেখানে গিয়ে বাস্তবতা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু সেখানে আপনারা কি করেন, এক পক্ষকে খুশী করার জন্য আপনারা ত্যাগী নেতাকর্মীদের আপনাদের একটি সামান্য কলমের খোঁচায় জীবনের লালিত-পালিত স্বপ্নকে নষ্ট করে দেন।

আপনাদের সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে আজকের ছাত্রলীগ কর্মী সমাজের চোখে খারাপ হয়ে আছে এর জন্য দায়ী আপনারা কোন কর্মীরা না। বাংলাদেশের একটিমাত্র সংগঠন যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার আজন্ম স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যত টুকু সোনালী অর্জন তার সবটুকুর গর্বিত অংশিদার এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মানে শুধু তারা নয় যারা নেতৃত্ব দেয় বা নেতৃত্ব স্থানীয় বরং এর গর্বিত অংশিদার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটারে থাকা প্রতিটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে নিয়ে রাজনীতি করে।

 সর্বশেষ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রতিটি ইউনিট এ যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন আপনাদের কাছে আহ্বান থাকবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন ছাত্রলীগকর্মীকে মামলায় দিয়ে খারাপের তাকমা গায় না লাগিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দিন আর ত্যাগী যোগ্য নেতাকর্মীদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিন। তা না হলে অযোগ্য পাত্রে যেমন কন্যা দান করলে কন্যা সুখী হয় না, সেরকম অযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে কখনো যোগ্য নেতৃত্ব আশা করা যায় না। সেই অযোগ্য নেতৃত্ব কে সাধারণ মানুষ খারাপ বলবে এটাই স্বাভাবিক। এরকম অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে ছাত্রলীগের সোনালী অর্জন ম্লান হতে চলছে, আর এর দায়ভার নিতে হচ্ছে প্রতিটি ছাত্রলীগ কর্মীকে যা দলের জন্য ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব জন্য হুমকিস্বরূপ।

ভালো থাকুক প্রতিটি ইউনিটি নেতৃত্ব দানকারী ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী যাদের বুক ফাটা কষ্ট ও আত্মচিৎকার চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করে দেশের প্রয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দেশের প্রয়োজনে সম্মুখযুদ্ধে সব সময় এগিয়ে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *